পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যালেটসের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে ‘ত্রিবেণী: দ্য রিদম অফ ওয়াটার’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ৪০টি চিত্রকর্ম। এসব চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে জল রং ও অ্যাক্রেলিক রঙে আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি প্রতিকৃতি, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের একটি প্রতিকৃতিসহ প্রায় এগারোটি প্রতিকৃতি। বাঙালি নারী ও গ্রাম-বাংলার প্রকৃতিকে ক্যানভাসে তুলে এনেছেন শিল্পী।
লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেট আয়োজিত মাসব্যাপী নাট্যউৎসবে ‘সিজন অব বাংলা ড্রামার’ অংশ হিসেবে পহেলা নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ চিত্র প্রদর্শনী শেষ হবে ২৪ নভেম্বর। রোববার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।
নাট্য ব্যক্তিত্ব নূর ছাড়াও এদিন প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন কবি শামীম আজাদ, অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা লিসা গাজী, কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এলিস্টার ক্যাম্পবেল ও লন্ডনে বসবাসরত ফরাসি অভিনেত্রী এসরা সিসে।
মৌনি মুক্তা চক্রবর্তীর চিত্রকর্মের প্রশংসা করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “আসলে তার আঁকায় একটা অদ্ভুত ধ্রুপদী সাঙ্গীতিক বিষয় আছে।”
কবি শামীম আজাদ বলেন, “আমাদের প্রিয় মৌনীর চিত্র প্রদর্শনী দেখে আমি মুগ্ধ। তাতে আছে নারী অভিব্যক্তির পরম্পরা, মানুষের মানসিকতার মুহূর্ত বিভাজন, রঙের বাহাদুরি এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতির জনকের প্রতিকৃতি আছে। প্রতিটি কাজে ফুটে উঠেছে শিল্পীর অভিনিবেশ ও নিষ্ঠা।”
মৌনি মুক্তার প্রতিটি চিত্রকর্ম মুহূর্তের মধ্যে বাংলাদেশের কথা মনে করিয়ে দেয় বলে মন্তব্য করেন লিসা গাজী।
কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এলিস্টার ক্যাম্পবেল বলেন, “মৌনী মুক্তার পেইন্টিংয়ে এক ধরনের ম্যাজিক আছে, যা দর্শককে কিছুক্ষণের জন্য থামতে বাধ্য করে। চিন্তাশক্তিকে উসকে দেয় চিত্রকর্মের রং ও বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবার জন্য।”
ব্রিটিশ পরিবেশবিদ মুসগ্রোভ বলেন, “চমৎকার আয়োজন এবং নামের সঙ্গে অদ্ভুত মিল। ত্রিবেণী মানে তিনটি নদীর মিলনস্থল। চিত্রশিল্পী মৌনী মুক্তা যেন বাংলাদেশের তিনটি নদীর বিমূর্ত রূপগুলো তুলে এনেছেন সুদূর ব্রিটেনে। এ ধরনের শিল্পকর্মকে জলবায়ু রক্ষার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকে বেগবান করা সম্ভব।”
প্রদর্শনী ঘুরে দেখে ফরাসি অভিনেত্রী এসরা সিসে বলেন, “ভিন্নতা থাকলেও প্রতিটি কাজই কোথাও যেন একটা অদৃশ্য সূত্রে গাঁথা এবং এটাই একজন চিত্রশিল্পীর সার্থকতা। শত বৈচিত্র্যেও নিজের স্বতন্ত্র চিন্তা-ভাবনাকে খুবই সতর্কভাবে মেলে ধরা, যাতে নিজের আলাদা এই ভাবনা বৈচিত্র্যটাকে অতিক্রম না করে আবার স্বাতন্ত্র্যও বজায় থাকে।”
শিল্পী মৌনী মুক্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার স্বপ্ন ছিল একদিন নিজের একক চিত্র প্রদর্শনী করব। আজ সেই স্বপ্ন সফল হল। ইতোমধ্যে সাতটি ছবির বুকিং হয়ে গেছে।”
মাসব্যাপী এই চিত্র প্রদর্শনীর অংশ হিসাবে গত রোববার বিকেলে প্রদর্শনী কেন্দ্রে ছিল ‘লাইভ ব্লেড অব আর্ট, মিউজিক অ্যান্ড পার্কেশন’ শিরোনামে একটি লাইভ আর্ট এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সঙ্গীত পরিবেশনা। নদীভিত্তিক শিল্প ও সাহিত্য বিষয়কে উপজীব্য করে অসীম চক্রবর্তীর রচনা ও নির্দেশনায় লাইভ আর্ট অ্যান্ড মিউজিক এক্সপেরিমেন্টাল শো’য়ের মঞ্চায়নে সঞ্চালনা করেন নাজিম উদ্দিন, সংগীত পরিবেশন করেন ব্রিটিশ শিল্পী গ্যারি কফ্লান ও তৃষা ভট্টাচার্য্য।
অনুষ্ঠানটির শিল্প-পরিকল্পনায় সুদীপ চক্রবর্তী এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে সত্যব্রত দাশ স্বপন ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে শিল্পী মৌনী মুক্তা চক্রবর্তী তাৎক্ষণিক আঁকা একটি চিত্রকর্ম ‘সিজন অব বাংলা ড্রামা’ আয়োজক কমিটির প্রধান কাজী রুখসানা বেগমের কাছে দেন সেটি বিক্রি করে পাওয়া অর্থ টাওয়ার হ্যামলেটের একটি চ্যারিটিকে দান করার জন্য।