ভাটিয়ালি গান: ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাম্প্রতিক কাল

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংগীতধারায় ভাটিয়ালি গান আঞ্চলিক গণ্ডিকে অতিক্রম করে স্বতন্ত্র মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। প্রাচীন বাংলার সাংগীতিক ঐতিহ্য চর্যাপদ থেকে শুরু করে মধ্যযুগের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন হয়ে সাম্প্রতিক কালের বাংলাদেশে ঐতিহ্যিক পরম্পরায় কীভাবে এই গানের উদ্ভব, বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছে তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এই আলোচনায়। কিন্তু প্রাচীন এই সাংগীতিক ঐতিহ্যকে একটি আলোচনায় ধারণ করা অতীব কঠিন ব্যাপার। তথাপিও প্রাথমিক কিছু আলোচনার ভেতর দিয়ে এই গানের সাংগীতিক ঐতিহ্যের ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে ধারণা করা যেতে পারে। অতএব শুরু করা যাক।

vatiyali gan by symon jakariya

‘ভাটিয়ালি’ কথাটির অর্থ, উৎস এবং ভাটিয়ালি গানের প্রাথমিক ও ভৌগোলিক পরিচয়

ভাটিয়ালি শব্দটির প্রথমাংশ ‘ভাটি’ বলতে অভিধানকারগণ ‘নিম্নদিক’, ‘নিম্নাভিমুখী’, ‘নিম্নপ্রবাহী’ প্রভৃতিকে বুঝিয়েছেন। সাধারণত নদীর স্রোত যেদিকে প্রবাহিত হয় সেই দিককে ‘ভাটি’ বলে। সেই ‘ভাটি’র সঙ্গে বিশেষণবাচক তদ্ধিত প্রত্যয় ‘আল’ বা আলি’ যুক্ত হয়ে ‘ভাটিয়াল’ বা ‘ভাটিয়ালি’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ‘ভাটিয়ালি’ শব্দটির এ ধরনের গঠন ও উৎস বিচারপূর্বক অধিকাংশ গবেষক ‘ভাটিয়ালি গান’-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছেন, “ভাটির টানে নৌকা ছেড়ে দিলে বিনা আয়াসেই নৌকা চলতে থাকে। এই ‘অনায়াস’ এবং তজ্জাত ‘অবসর’ই ভাটিয়াল-ভাটিয়ালির রচনাগত উৎস। … । তবে, এ-কথা মানতেই হবে, ভাটিয়াল-ভাটিয়ালি মূলত নদী-প্রান্তরের গান…। এই অর্থে ভাটিয়ালি বিশেষভাবে পূর্ববঙ্গের গান, যে পূর্ববঙ্গ পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় নিম্নভূমি এবং সেই কারণেই নদী-হাওরে পরিপূর্ণ। পূর্ববঙ্গেও ভাটিয়ালির নানা উপ-আঞ্চলিক বিশেষত্ব আছে।” গবেষকের এই বর্ণনা হতে ভাটিয়ালি গানের প্রাথমিক ও ভৌগোলিক পরিচয় সম্পর্কে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে একথাও স্পষ্ট হওয়া গেলো যে, ভাটিয়ালি গানের প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চল হলো প্রাচীনকালের ‘পূর্ববঙ্গ’ তথা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ভাটিয়ালি এলাকার নানা উপ-অঞ্চলে নানা ধরনের সুর ও বাণীর বৈশিষ্টমন্ডিত ভাটিয়ালি গানের অস্তিত্ব রয়েছে। যেমন- বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের সাথে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের যেমন পার্থক্য রয়েছে তেমনি খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের সাথে বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের পার্থক্য রয়েছে। একই ভাবে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ভাটিয়ালি গান এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাটিয়ালি গান স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে অদ্যাবধি প্রবহমান রয়েছে। তবে, সেই আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কথা বলার আগে ভাটিয়ালি গানের প্রাচীনত্ব নিয়ে কিছু ইতিহাস চারণ সংগত বিবেচনা করি।

ভাটিয়ালি গানের প্রাচীনত্ব

ভাটিয়ালি গান কবে এবং কীভাবে উদ্ভব হয়েছিল- সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও এই গানের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তবে, বাংলাভাষার প্রাচীনতম সাহিত্য নিদর্শন চর্যাপদের একাধিক পদে ভাটিয়ালি গানের প্রাচীনত্বের নানাবিধ প্রমাণ রয়েছে। আমরা জানি, ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশে চর্যাপদের রচনা ও পরিবেশন প্রচলিত ছিল। ভাটিয়ালি গানের আলোচনায় অধিকাংশ গবেষক চর্যাপদের কবি ভুসুকুপার রচিত ৪৩ সংখ্যক পদের ‘বঙ্গাল’ রাগটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। আসলে, এই ‘বঙ্গাল’ রাগের উল্লেখ দেখে গবেষকগণ ভুসুকুপাকে বঙ্গাল অর্থাৎ বাংলাদেশের অধিবাসী হিসেবে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন। সেই সাথে চর্যাপদে উদ্ধৃত ‘বঙ্গাল’ রাগকে ‘ভাটিয়ারি’ বা ‘ভাটিয়ালি’ বলে মনে করেন। এই মতের পক্ষে গবেষক আরও বলেছেন যে, “একথা সত্য, পূর্ববাংলার সর্বাপেক্ষা নিজস্ব উল্লেখযোগ্য সঙ্গীতটিই ভাটিয়ালি। ইহার প্রসার ও অন্তর্নিহিত সুরগুণ বিচার করিয়া দেখিলে সহজেই মনে হইতে পারে যে, দীর্ঘকাল ধরিয়া ইহা সেই অঞ্চলের একটি বিশিষ্ট গীতিরূপ বলিয়া স্বীকৃতি লাভ করিয়া আসিতেছে। সুতরাং প্রাচীনতর কালে বঙ্গাল-রাগ ও ভাটিয়ালি একার্থবাচক হওয়া কিছু আশ্চর্য নহে।” গবেষকের এই বক্তব্যের পর ‘বঙ্গাল রাগে’ গীত ভুসুকুপা রচিত চর্যাপদের ৪৩ সংখ্যক পদটি উদ্ধৃত করা যেতে পারে। পদটি হলো:

চর্যা-৪৩
রাগ বঙ্গাল
ভুসুকুপা

সহজ মহাতরু ফরিঅ এ তৈলোএ।
সহজ সভাবে রে বাণত মুকা কোএ ॥ ধ্রু ॥
জিম জলে পাণিআ টলিআ ভেউ ন আঅ।
জিম মণ-রঅণারে সমরসে গঅণ সমাআ ॥ ধ্রু ॥
জাসু ণাহি অধ্যা তাসু পরেলা কাহি।
আই অনুঅনারে জাম মরণ ভব নাহি ॥ ধ্রু ॥
ভুসুকু ভণই কট রাউত ভনই কট সঅলা এহ সহাব।
জাই ণ আরয়ি রে ণ তঁহি ভাবাভাব ॥ ধ্রু ॥

পদটি সমকালীন বাংলায় গীত রূপান্তর করলে হয়:
সহজ মহাতরু স্ফুরিত এ ত্রিলোকে
খসম স্বভাবে বাঁধন হইতে মুক্ত বল কে
যেমন জলে পানি টলিলে ভেদ করা না যায়
তেমন মনোরত্ন রে সমরসে গগনে সামায়
যার নাই রে আপন তার আর পর কোথায়
আদৌ অনুৎপন্ন সম্বন্ধে জন্ম মরণ ভব নাই
ভুসুকুপার সাথে রাজপুত বলে সকলই এক স্বভাব
এখানে না যায় না আসে রে তার ভাবাভাব॥

লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, চর্যাপদের উপর্যুক্ত গানে মূলত তত্ত্বকথা উল্লিখিত হয়েছে। এই দিকে দৃষ্টি দিয়ে গবেষক বলেছেন, “ভাটিয়ালিতে তত্ত্বকথাও স্থান পাইয়া থাকে, সুতরাং ইহাতে তত্ত্বকথা আছে বলিয়া ইহা ভাটিয়ালি হইবার পক্ষে কোন বাধা নাই। যদি ইহা ভাটিয়ালিই হইয়া থাকে, তবে খৃষ্টীয় দশম শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত ভাটিয়ালি নামটির যে উৎপত্তি হয় নাই, তাহা বুঝিতে পারা যায়। তখন সম্ভবত ইহা বঙ্গাল দেশ বা পূর্ববঙ্গের গীতরূপে বঙ্গাল রাগ বলিয়াই পরিচিত ছিল।” কিন্তু, একথাও সত্য যে, চর্যাপদে শুধু ‘বঙ্গাল রাগে’ই ভাটিয়ালি গানের সন্ধান পাওয়া যায় না, অন্যান্য রাগেও চর্যাপদের কিছু কিছু পদে ভাটিয়ালি গানের সন্ধান পাওয়া যায়। আমাদের অনুসন্ধানে চর্যাপদের যে সকল পদে ভাটিয়ালি গানের বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায় সেগুলো হলো: ৫, ৮, ১০, ১৩, ১৪, ৩৮, ৪৯ প্রভৃতি সংখ্যক পদ। এই সকল পদে নদী তীরবর্তী মানুষের অন্তহীন জীবন জিজ্ঞাস্য ও “বিষণ্ণ বৈরাগ্যের” কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন- চর্যাপদের ৫ সংখ্যক পদে চাটিলপা-র জিজ্ঞাস্য হচ্ছে- “ভবনই গহন গম্ভীর বেগে বাহী। / দুআন্তে চিখিল মাঝেঁ ন থাহী ॥ ধ্রু ॥” অর্থাৎ, “এই ভব নদী গম্ভীর বেগে / বয়ে চলে কোথা যায় / দুই কূল জোড়া কাদার গাদা / মাঝখানে থই নাই॥” ৮সংখ্যক পদে কম্বলাম্বরপা বলেছেন- “সোনে ভরিতী করুণা নাবী / রূপা থোই মাহিকে ঠাবী ॥ ধ্রু ॥” অর্থাৎ “করুণার নৌকা ভরিল সোনায় / রূপা তবে আর রাখবে কোথায়॥” ১৪ সংখ্যক পদে ডোম্বীপা লিখেছেন- “গঙ্গা জঊনা মাঝেঁরে বহই নাঈ / তহিঁ বুড়িলী মাতঙ্গি পোইআ লীলে পর করেই ॥ ধ্রু ॥” অর্থাৎ, “নাও বয়ে যায় গঙ্গা যমুনায় / মাতঙ্গি চড়ে পার করে লীলায়।” ৩৮ সংখ্যক পদে সরহপা লিখেছেন- “কাঅ ণাবড্হি খান্টি মণ কে আল।/ সদগুরু বঅণে ধর পতবাল ॥ ধ্রু ॥” অর্থাৎ, “দেহের নৌকায় মনের বৈঠা আছে / গুরুর বচনে হাল ধরে রও / পারাপারে যেতে।” ৪৯ সংখ্যক পদে ভুসুকুপা লিখেছেন- “বাজ ণাব পাড়ী পঁউআ খালেঁ বাহিউ। / অদঅ বঙ্গালেঁ দেশ লুড়িউ ॥ ধ্রু ॥” অর্থাৎ, বজ্রনৌকা পাড়ি দিয়েই / বাওয়া হলো পদ্মখাল / লুঠল কারা কোন সাহসে / অদ্বয় রূপের এ বঙ্গাল॥” চর্যাপদের এ সকল গানের বাণীতে বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের মানুষের নদী, নৌকা ও জীবন-সাধনার কথা নিখুঁতভাবে চিত্রিত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাচীন বাংলার সাহিত্য নিদর্শন চর্যাপদ হতে ভাটিয়ালি গানের পরিচিতি ও প্রবণতার কথা জানা যাচ্ছে।

এবার ‘ভাটিয়ালি’ কথাটি কিভাবে উদ্ভব হলো সে সম্পর্কে সাহিত্যিক পাঠ বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। গবেষক মতে, ভারতীয় প্রাচীন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মধ্যে ‘ভাটিয়ারী’ নামে একটি রাগিণী রয়েছে। মধ্যযুগের বাংলার বৈষ্ণব পদাবলীতেও ‘ভাটিয়ারি’র রাগিণীর ব্যাপক উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে, “ভাটিয়ালির মৌলিক প্রকৃতির মধ্যে যে ভাব-গভীরতা ও সুরের বিস্তার আছে, ভাটিয়ারীর মধ্যে তাহা নাই” বলে গবেষক আমাদের সর্তক করে দিয়েছে। আসলে, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও ‘বৈষ্ণব পদ-লহরী’তে নির্দেশিত ‘ভাটিয়ারী’ মূলত মাত্রা ও তাল-ভিত্তিক উচ্চাঙ্গ-সঙ্গীত, তার সঙ্গে ভাটিয়ালির তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।

বাংলার প্রাচীন গীতিসাহিত্যের অভূতপূর্ব নির্দশন বড়– চন্ডিদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে ‘ভাটিআলী’ নামে একটি রাগের উল্লেখ দেখা যায়। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন রচিত হয়েছিল চর্যাপদের পর তথা ১৩০০ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। ভাটিয়ালি গানের প্রাচীনত্বের ব্যাখ্যায় গবেষক বলেছেন, “সুতরাং পূর্ববাংলার ভাটিয়ালিই যে ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনে’ ‘ভাটিআলী’ বলিয়া উল্লেখিত হইয়াছে, এমন অনুমান করা নিতান্ত অসঙ্গত হইবে না। বিষয়ের দিক দিয়াও যদি বিচার করিয়া দেখি, তাহা হইলেও বুঝিতে পারা যাইবে যে, পূর্ববাংলার ভাটিয়ালির সঙ্গে যে ‘শ্রীকৃষ্ণ-কীর্তনে’র ‘ভটিআলী’র একেবারেই কোন ঐক্য নাই, তাহা নহে। পূর্ববাংলার ভাটিয়ালি যেমন বিরহ, বিচ্ছেদ ও বেদনার গান ‘শ্রীকৃষ্ণ-কীর্তনে’র ‘রাধা-বিরহ’ খন্ডে অধিক সংখ্যক ভাটিআলী রাগের উল্লেখ আছে। ইহার রাধা-বিরহ অংশ শ্রীরাধিকার সুগভীর অন্তর্বেদনার ভারে ভারাক্রান্ত।” শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের প্রায় ১৮টি গীত ‘ভাটিআলী’ রাগের অন্তর্ভুক্ত। যার মধ্যে সব গীতই নিরাশা ব্যঞ্জক। অর্থাৎ বাংলাদেশের ভাটিয়ালি গানের যা প্রধান বৈশিষ্ট্য তা শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে “ভাটিআলী” রাগ নির্দেশিত প্রত্যেকটি গানের মধ্যদিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। এক্ষেত্রে ভাটিয়ালি গানের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হাওয়া যায় যে, এই গান চর্যাপদের কাল হতে শুরু করে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন রচনা কালে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। অতএব, বাংলাদেশের ভাটিয়ালি গান প্রাচীন বাংলার সংগীতের পরিচয়কে বহন করে চলেছে।

ভাটিয়ালি সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা

গ্রন্থগত বিদ্যায় শিক্ষিতদের মাঝে ভাটিয়ালি গান সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে- “দিগন্ত বিস্তৃত হাওরের বুকের উপর দিয়া অলস মন্থর গতিতে ভাসমান নৌকার হাল ধরিয়া থাকিয়া তখন মাঝি দেহে এবং মনে একটু অবসরের সুযোগ পায়, তখনই ভাটিয়ালি সুর তাহার কণ্ঠে আপনা হতেই জাগিয়া উঠে।” গত শতাব্দীর ষাটের দশকে লেখা এই বাক্যটিই পরবর্তীকালে ভাটিয়ালি গানের একমাত্র পরিচিতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। যার প্রমাণ আছে পরবর্তীকালের বিভিন্ন মনীষীর লেখাতে। ভাটিয়ালি গানের উদ্ভব ও প্রকৃতি নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টান্তেরও সাক্ষাৎ মেলে, যেমন-
১. “কেবল মাত্র নদীর সঙ্গেই যে ভাটিয়ালির সম্পর্ক, তাহাই নহে- বিশাল প্রান্তরের দিগন্ত প্রসারিত বিস্তার, তাহার উপর দিয়া অলস মন্থর গতির পথযাত্রা, প্রকৃতির মধ্যে উদাসী বিষণ্ণ বৈরাগ্যের রূপ- ইহারা ভাটিয়ালির প্রেরণা দান করিয়া থাকে।”
২. “ভাটিয়ালি গান প্রধানত বিরহ-বেদনা ও নৈরাশ্যের গান- এই বিরহ-বেদনা যেমন প্রণয়-গত নৈরাশ্য-জনিত হইতে পারে, তেমনই আধ্যাত্ম-জীবনের অসম্পূর্ণতা বোধ হইতেও সৃষ্টি হইতে পারে।” আমরা মূলত শেষোক্ত মন্তব্যের আলোকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানকে পর্যবেক্ষণ করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে ভাটিয়ালি গানের স্বরূপ অন্বেষণে নতুন গবেষণার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা যায়।

ভাটিয়ালি গানের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য

আগেই বলা হয়েছে, ভাটিয়ালি গানের সুর ও বাণী মূলত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক পরিবেশজাত। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভাটিয়ালি গানের বিষয়বস্তু এদেশের মাঝি, মাল্লা, রাখাল, কৃষক, শ্রমজীবী ও সাধকদের দৈনন্দিন জীবন উপলদ্ধি ও জীবনযাত্রার সুখ, দুঃখ, প্রেম ও বিরহ-বোধ। কে না জানে, চিরায়ত কাল থেকে এদেশে প্রেমের মধুর ভাব বিরহ বেদনার আমেজেই পরিপূর্ণ। এই প্রেমের আখ্যানই ভাটিয়ালি গানের বাণী ও সুরের মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য সঞ্চার করেছে। সংগীত-গবেষকের ধারণা, এই গানের উৎপত্তি হয়েছে চিন্তাশীল মানুষের অন্তঃস্থল থেকে। তাই সর্বকালের মানুষের মনের মণিকোঠায় এই গান রেখাপাত করেছে। তবে, একথাও মনে রাখতে হবে যে, ভাটিয়ালি গান চিরদিন একই ধরনের বিষয়বস্তুকে আঁকড়ে ধরে থাকেনি। যুগের পরিবর্তনে ভাটিয়ালি গানের বিষয়বস্তুতে নানা ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গবেষক মতে, “বাংলাদেশের বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবে লৌকিক জীবন সুখ, দুঃখ, প্রেম ব্যথার পরিবর্তে বাউলের তত্ত্বকথা বা বৈষ্ণব সহজিয়া ভক্তি ও প্রেমরসে পরিপূর্ণ হওয়ায় বৈষ্ণব যুগের পরবর্তী কালেই এর বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সেজন্য দেখা যায় ভাটিয়ালি গানের বিষয়বস্তুতে যখন বাউলের তত্ত্বকথা বা বৈষ্ণব সহজিয়া ভাবের উদয় হয়েছে, তখন ভাটিয়ালি সুর প্রকৃতির প্রাণঢালা সম্ভারের সঙ্গে বাউল বা বৈষ্ণব সহজিয়ার তত্ত্বকথাকে করেছে সাঙ্গীকরণ- তারাই ফল স্বরূপ নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকে বজায় রেখে চলেছে।” গবেষকের এ ধরনের মন্তব্য পাঠে সাম্প্রতিক কালে প্রচলিত ভাটিয়ালি গানের বিষয়বস্তুর বিচিত্রতাকে স্বীকার করে নিতে কোনো দ্বিধা থাকে না। তবে, ভাটিয়ালি গানের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য যে শুধু নতুন কালের তাও কিন্তু নয়। কেননা, আমরা ভাটিয়ালি গানের প্রাচীনত্বের সন্ধানে যে দৃষ্টান্ত ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছি তাতে তো প্রাচীন কাল থেকেই বিচিত্র বিষয় নিয়ে ভাটিয়ালি গানের রচনার ইতিহাস পাওয়া গেছে।

ভাটি অঞ্চল ও ভাটিয়ালি গানের আঞ্চলিক ভিন্নতা প্রসঙ্গ

শুরুতেই আমরা ভাটিয়ালি গানের ভৌগোলিক পরিচয় দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছিলাম যে, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ভাটি অঞ্চল রয়েছে এবং প্রতিটি ভাটি অঞ্চলে ভিন্ন ধরনের ভাটিয়ালি গানের অস্তিত্ব রয়েছে। এবারে আমরা বাংলাদেশের প্রধান ৮টি ভাটি অঞ্চলের পরিচয় এবং সে সকল অঞ্চলে প্রচলিত ভাটিয়ালি গানের কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে পারি। তার আগে বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশের এই ভাটি অঞ্চলের বিভাজন গবেষকের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণজাত। এ বিষয়ে কারো কোনো যুক্তিপূর্ণ ভিন্নমত থাকলে তা সাদরে গ্রহণ করা হবে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও ভাষাগত ভিন্নতার সঙ্গে সুরের স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য বিচারে বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলকে যে ৮টি ভাগে বিভক্ত করা যায়, তা হলো-

১. বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল
২. বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল
৩. বৃহত্তর খুলনা অঞ্চল
৪. বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চল
৫. বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চল
৬. বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চল
৭. বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল
৮. বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল।

এ সকল অঞ্চলে ভাটিয়ালি গানের ভিন্নরূপ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের বাণীর উল্লেখপূর্বক তার স্বরূপ বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জটিল ও দুরহ কর্ম বিবেচনা করি। কেননা, এ পর্যন্ত এমন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কোনো প্রবন্ধ রচনা তো দূরের কথা অদ্যাবধি কোনো আলোচনারও অবতারণা করা হয়নি।

এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আমরা এখানে সকল অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের ভিন্নতা সম্পর্কে আলোচনা করতে না পারলেও কয়েকটি অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের বিশেষত্ব সম্পর্কে দৃষ্টান্ত তুলতে ধারতে চাই। তার আগে ভাটিয়ালি গানের বিশেষত্ব সম্পর্কে কিছু কথা বলে নেওয়া যাক।

ভাটিয়ালি গানের বিশেষত্ব

বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমরা মূলত আত্মচেতনা বিস্মৃত। আমাদের ধারণা, এই আত্মবিস্মৃতির ভেতর থেকেই এদেশের সৃষ্টিশীল মানুষ ভাটিয়ালি গান সৃষ্টি করেছে। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে প্রত্যক্ষ করা যায় যে, আমাদের আত্মবিস্মৃতির মধ্যে প্রধানত ৩টি প্রশ্ন অনুপস্থিতি রয়েছে, যথা-
১. আমরা কোথায় ছিলাম ?
২. কোথায় এলাম ?
৩. কোথায় যাবো ?

আসলে, বাংলাদেশের ভাটিয়াল গানের বাণীসমূহ পর্যবেক্ষণ করলে উপলদ্ধি করা যায় যে, এই তিনটি প্রশ্নের উপর দাঁড়িয়ে ভাটিয়ালি গানগুলো রচিত হয়েছে।

এই গানের বিশেষত্বের মধ্যে যুক্ত হয়ে আছে- দিবসের শেষ ও জীবনের শেষের পরম আর্তি বা পরম এক উপলদ্ধি। মূলত দিবসের শেষ ও জীবনের শেষের মধ্যে কোনো কর্মতৎপরতা থাকে না। জীবনের শেষ মানে হলো- যখন জীবন প্রকৃতির নিয়মে ভাটির দিকে চলে, তাকে আর কিছুতেই উজান স্রোতে টেনে নেওয়া যায় না; জীবন তখন পরিণতির দিকে ধাবিত হতে থাকে, অর্থাৎ মৃত্যুর নিকটবর্তী হতে থাকে। জীবনের এই পরিণতি দৃষ্টে এবং ভাটিতে ধাবমান জীবনচক্রের বিধান পর্যবেক্ষণজাত চিন্তা ও চেতনার ভেতর থেকেই জন্ম লাভ করে ভাটিয়ালি গান।
‘ভাটি-বাংলা’ তথা সমুদ্র তীরবর্তী বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমরা যেমন ‘জোয়ার-ভাটা’র কথা জানি, তেমনি বর্ষায় থৈ থৈ নদী ও হাওরের যৌবন-জোয়ার এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে তার ভাটির টান সম্পর্কেও আমাদের অভিজ্ঞতা আবহমান কালের। সেই বোধ থেকে এদেশের মানুষ দেখেছেন জীবনে যেমন নদী, সাগর, হাওরের মতো জোয়ার আসে তেমনি অনিবার্যভাবে ভাটি আসে। আসলে, জোয়ারে চলা নয়, ভাটির স্রোতে তথা ঢেউয়ের অনুকূলে যাওয়ার বোধ থেকেই ভাটিয়ালি গানের চর্চা ও প্রসার।

ভাটিয়ালি গানের আঞ্চলিক বৈচিত্র্য

ভাটিয়ালি গানের আঞ্চলিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা বলে নিতে হবে। কেননা, তিনি ভাটিয়ালি গানের সুরের ঐতিহ্য অনুসরণে বা মিশ্রণে ৪টি গান রচনা করেছিলেন, রবীন্দ্রসংগীতের স্বরবিতানের ৯, ৪২, ৪৬ ও ৫২ খন্ডে যার প্রমাণ রয়েছে। জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন জমিদারী পরিচালনার কাজে কুষ্টিয়ার গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করতেন তখন সেখানকার মানুষের মুখে ভাটিয়ালি গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং পরে ভাটিয়ালি সুরের মিশ্রণে কয়েকটি গান রচনা করেছিলেন।

ক) কুষ্টিয়া অঞ্চলের ভাটিয়ালি গান:
কুষ্টিয়া অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের বাণী ও সুরকে ‘বাউল-ভাটিয়ালি’ বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। ইতিহাসে পাওয়া যায়, কুষ্টিয়া অঞ্চলের গগন হরকরার “আমি কোথায় পাবো তারে আমার মনের মানুষ যে রে” গানটির ‘বাউল-ভাটিয়ালি’র সুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” দেশাত্মবোধক গানটি রচনা করেছিলেন তা এখন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। এই তথ্যসূত্রে বলা চলে কুষ্টিয়া অঞ্চলের ‘বাউল-ভাটিয়ালি’ সুর ও গান বাংলাদেশের ভাটিয়ালি গানের আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের মধ্যে বিশেষ একটি স্থান গ্রহণ করে আছে। উপর্যুক্ত অঞ্চলে শ্রেষ্ঠ সাধক কবি লালন সাঁই ও অন্য সাধকের অনেকের রচনায় ভাটিয়ালি গানের পর্যায়ভুক্ত গানের সন্ধান মেলে। লালন সাঁইয়ের রচিত “আমি অপার হয়ে বসে আছি”, “পেয়েছি এক ভাঙা নৌকা / জনম গেল ছেঁচতে পানি” প্রভৃতি গানের বাণী চর্যাপদের তত্ত্বকথা বা দেহসাধনা পর্বের ভাটিয়ালি গানের ঐতিহ্যকে পরম্পরা হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে।

খ) খুলনা অঞ্চলের ভাটিয়ালি গান:
খুলনা অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের বাণী ও সুরকে ‘বিচ্ছেদ-ভাটিয়ালি’ হিসেবে উল্লেখ হয়। এই অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের প্রধান রূপকার হলেন নড়াইল জেলার কবিসুধাকর বিজয় সরকার। তাঁর রচিত ভাটিয়ালি গানের সুর-বাণী বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত ভাব-বিপ্লবে ভাসিয়ে দিয়েছে। গবেষক মতে, “পাগল বিজয়ের [বিজয় সরকারের] ‘বিচ্ছেদ-ভাটিয়ালী’ বাংলার অপূর্ব এক সম্পদ।” বিজয় সরকার তাঁর একটি ভাটিয়ালি গানে লিখেছেন- “ভাটির নদী বয়ে যায় রে, কয়ে যায় তার শূন্য বুকের ব্যথা। / জোয়ারে ভরিয়ে নদী যখনে সে উজান দিকে চলে, / তার বিপুল স্রোতে দুকুল ভাসায় রে, / কুল কুল রবে নদী কত কথা বলে, / আবার ভাটির টানে ধীরে ধীরে নদী সাগর মুখে কেঁদে ফিরে / তার হারান মন চাহে ফিরে ব্যাকুল বেদনায় রে॥” এই গানের বাণীতে ভাটিয়ালি গানের মর্মগাঁথা ও তাৎপর্য যেন স্বরূপে ফুটে উঠেছে। সেই সাথে এই গানের সুরের ভেতর বিচ্ছেদী সুর অধিক আবেগ সঞ্চার করে হয়ে উঠেছে “বিচ্ছেদ-ভাটিয়ালি”। খুলনা অঞ্চলের কবিগানের আসরে অদ্যাবধি এই “বিচ্ছেদ-ভাটিয়ালি” গানের সুর প্রবহমান রয়েছে।

গ) ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভাটিয়ালি গান:
ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানে মূলত নারীর বিরহ-বোধ তীব্রভাবে প্রকাশ হতে দেখা যায়। দুটি দৃষ্টান্ত দিলে এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। প্রথম দৃষ্টান্তটি জালাল উদ্দীন খাঁ (১৮৯৪-১৯৭২) রচিত গান হতে দিচ্ছি, জালাল তাঁর ভাটিয়ালি গানে লিখেছেন- “আরে ও ভাটিয়াল গাঙ্গের নাইয়া / ঠাকু ভাইরে কইও আমায় নাইয়র নিতো আইয়া॥ / ঐ না ঘাটে বইয়ারে কান্দি দেশের পানে চাইয়া / চক্ষের পানি নদীর জলে যাইতেছে মিশিয়ারে॥” প্রায় একই ধরনের কথার প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় একই অঞ্চলের আরেক সাধক কবি উকিল মুন্সী (১৮৮৫-১৯৭৮) রচিত গানের বাণীতে। উকিল মুন্সীর বিখ্যাত একটি ভাটিয়ালি গানের বাণী হলো- “আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে পুবালি বাতাসে / বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি আমারনি কেউ আসে রে॥ / যেদিন হইতে নয়া পানি আইলো বাড়ির ঘাটে সখি রে / অভাগিনীর মনে কত শত কথা ওঠে রে॥” এক্ষেত্রে ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের বাণীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলো। সেই সাথে উপর্যুক্ত অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের সুরেও যে স্বকীয়তা রয়েছে সে সম্পর্কে সংগীতের শ্রোতামাত্র জ্ঞাত আছেন।

ঘ) সিলেট অঞ্চলের ভাটিয়ালি গান:
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল ভাটিয়ালি গানের সমৃদ্ধ একটি এলাকা। এই অঞ্চলের প্রায় সকল সাধক কবির রচনায় ভাটিয়ালি গানের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে, তাঁদের মধ্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাধক কবি শাহ আবদুল করিমকে ভাটিয়ালি গানের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি ও রূপকার হিসেবে উল্লেখ করা যায়। তাঁর প্রকাশিত অধিকাংশ গানের সংকলনের নামেই এই শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রয়েছে। যেমন- শাহ আবদুল করিমের ৬টি সংগীতসংকলনের মধ্যে ৩টি সংকলনের নামের সঙ্গে ভাটিয়ালি গানের সূত্র আবিষ্কার করা যায়, যথা- কালনীর কূলে, ভাটির চিঠি ও কালনীর ঢেউ। এ সকল গানের সংকলনের নামকরণের মাধ্যমে সুনামগঞ্জের কালনীর নদীতীরবর্তী অঞ্চলের সাধক কবি শাহ আবদুল করিম একই সঙ্গে নিজেকে সচেতনভাবে ভাটি অঞ্চলের কবি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন অন্যদিকে নিজের কাব্যসত্তায় ভাটির প্রভাবকে স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে, ভাটিয়ালি গানের চিরায়ত রূপ “মনমাঝি তোর বৈঠা নেরে / আমি আর বাইতে পারলাম না”র পরিবর্তে শাহ আবদুল করিম গুরুবাদী ধারায় দীক্ষিত হয়ে অভিনবত্ব সংযোজন করেছেন। তিনি লিখেছেন- “ও মনমাঝি রে / অকূল সাগরে তোমার নাও / অকূলেতে কূল মিলিবে / মুর্শিদ যদি পাও।” এক্ষেত্রে শাহ আবদুল করিমের ভাটিয়ালি গানে নিজস্বতায় জারিত হয়েছে। শুধু বাণীর ক্ষেত্রে নয়, সুরের ক্ষেত্রেও শাহ আবদুল করিম তাঁর ভাটিয়ালি অভিনবত্ব সংযোগ করেছেন। ইতিহাসের আলোকে যেখানে ভাটিয়ালি গানের সুরে বিচ্ছেদী ব্যাকুলতার সাথে ধীর লয়ের তাল প্রযুক্ত হতো শাহ আবদুল করিমের গানে সেখানে সুর-তালের ছান্দিক বুনন ভাটিয়ালি গানের সৌন্দর্যকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে এবং সিলেট অঞ্চলের ভাটিয়ালি গানকে তা প্রভাবিত করেছে। তাই তো বর্তমানে শাহ আবদুল করিমের অনুসরণেই সিলেট অঞ্চলের ভাটিয়ালি গান ব্যতিক্রমী মাধুর্য নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।

এভাবে অন্যান্য অঞ্চলের ভাটিয়ালি গান নিয়েও আলোচনা করা যেতে পারে। তবে, তার জন্য যেমন পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন তেমনি বিস্তর সময় প্রয়োজন। কিন্তু এখানে সেই সুযোগ ও অবকাশ নেই। তাই ভাটিয়ালি গানের অঞ্চলভিত্তিক আলোচনা এখানে আপাতত থামিয়ে রাখছি। অন্যত্র আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এবং আরও বেশি সময় নিয়ে সেই বিস্তার করতে পারবো বলে আশা রাখি।

ভাটিয়ালি গানের গায়ন-পদ্ধতি

ভাটিয়ালি গানের গীতি-রীতির একটি প্রধান লক্ষণ হলো এই যে, এর প্রথম পদটির কয়েকটি শব্দ একসঙ্গে গীত হবার পর এর সর্বশেষ স্বরটি দীর্ঘায়ত হয়ে উচ্চারিত হতে থাকে, এই দৈর্ঘ্যরে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিমাপ নাই, গায়কের মেজাজ ও রুচি অনুযায়ী তা যে কোনো সীমায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে। শুরুর পদটির সর্বাপেক্ষা চড়া সুরে উচ্চারিত হবার পরে পরবর্তী পদগুলোর ভেতর দিয়ে তা কখনও ক্রমে কখনওবা আকস্মিকভাবে খাদে নেমে আসে। ভাটিয়ালি গানের সমস্ত জোর গিয়ে প্রথম পদটির উপরই পড়ে এবং প্রথম পদটির ভাবই ক্রমে অন্যান্য পদগুলোর মধ্য দিয়ে নিম্নতর সুরে প্রকাশ পায়। সুতরাং ভাব এবং সুর উভয়ের জন্যই প্রথম পদটিই প্রধানত লক্ষ্য এবং প্রথম পদের শেষ স্বরটি ক্রমাগত দীর্ঘায়ত হয়ে উচ্চতর সুরে প্রকাশ করার ফলে এই স্বরটি অত্যধিক প্রাধান্য পেয়ে যায়।

গবেষক মতে, ভাটিয়ালি গান কখনও বর্ণাত্মক হয় না, কেবল ভাবাত্মক হয়ে থাকে। সেই জন্য এই গানের বাণী সবসময় রচনার দিক দিয়ে সংক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। তবে, স্বরের তুলনায় কথাংশ অপ্রধান বলে বর্ণনার বাহুল্য থাকলেও তা গীতের মধ্যে কদাচ ভার স্বরূপ হয়ে উঠে না। কারণ, একটি মাত্র চড়া সুরের দীর্ঘায়ত উচ্চারণ এর কথা বা ভাষাকে প্রায় সবসময় আচ্ছন্ন করে দেয়।

ভাটিয়ালি গানের গায়কী সম্পর্কে গবেষক আরও লিখেছেন- এই গান শুরুতেই যেমন চড়া স্বরের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়ে যায় তেমনি আবার পরক্ষণেই খাদের দিকে নেমে আসে, কখনওবা অত্যন্ত দ্রুত খাদেও মধ্যে এর স্বর নেমে আসে, আবার কখনও ধীরে ধীরেও নেমে আসে। সেইজন্য ভাটিয়ালিতে সাত স্বরেরই প্রয়োগ হয়ে থাকে। কিন্ত চড়া স্বরই এর লক্ষ্য থাকে বলে পরক্ষণেই এটা পুনরায় চড়ার দিকে অগ্রসর হয়ে যেতে পারে। স্বরের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন স্তরে উত্থান পতনের মধ্যদিয়েই ভাটিয়ালির আবেদন প্রকাশ পায়। অন্তরের অবরুদ্ধ বেদনা যেন এর মধ্যদিয়ে একবার দিগন্তে গিয়ে প্রতিহত হয়েই অন্তরের মধ্যে ফিরে এসে পুনরায় স্তম্ভিত হয়ে যায়। এই গুণে ভাটিয়ালি গানের একটি নিজস্ব বিশেষত্ব রয়েছে।

শহরে ভাটিয়ালি…। সাধিকা সৃজনী তানিয়া

‘নাগরিক ভাটিয়ালি’ ও ‘শহুরে ভাটিয়ালি’

গ্রামীণ সংস্কৃতিতে ভাটিয়ালি গানের রচনা ও পরিবেশনে অন্তরের আকুতি, ব্যথিত হৃদয়ের ক্রন্দন ও আবেগের অকৃত্রিম প্রয়োগ দৃশ্যমান থাকে। কিন্তু নাগরিক সংস্কৃতিতে ভাটিয়ালি গানের উপস্থাপনে গ্রামের মতো অকৃত্রিম আবেগের সঞ্চার প্রত্যক্ষ করা যায় না। তাই তো গবেষকগণ লিখেছেন- “সহরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিংবা চলচ্চিত্রে, বেতারে কিংবা রেকর্ডে বিচিত্র বাদ্য-যন্ত্রের সহযোগে আমরা যে ভাটিয়ালি শুনিতে পাই, তাহা প্রকৃত ভাটিয়ালিই নহে- ইহাকে ‘নাগরিক ভাটিয়ালি’ বলিয়া নির্দেশ করা যায়; সুতরাং এই তথাকথিত ‘ভাটিয়ালি’ শুনিয়া বাংলার এই বিশিষ্ট লোক-সঙ্গীত সম্পর্কে কোন ধারণাই করিতে পারা যাইবে না। বাদ্য-যন্ত্র প্রায় সর্বদাই কণ্ঠস্বরের দৈন্য গোপন করিয়া থাকে। কিন্তু যাহার কণ্ঠস্বরের মধ্যে একদিকে গভীরতা এবং অন্যদিক দিয়া উচ্চতম গ্রামে উঠিয়া যাইবার ক্ষমতা নাই, তাহার পক্ষে আর যে লোক-সঙ্গীত পরিবেশন করাই সম্ভব হউক না কেন, ভাটিয়ালি পরিবেশন করা সম্ভব হইবে না। স্বভাব-সিদ্ধ এই স্বরগুণে অধিকার যাহার না থাকে, সে অনুশীলন করিয়াও তাহার অধিকারী হইতে পারে না। পল্লী-জীবনে ভাটিয়ালির অবসর যে ভাবে আসে, তাহাতে আয়োজন করিয়া তাহা পরিবেশন করা সম্ভব হয় না। পল্লী-গায়কের মধ্যে ভাটিয়ালীর মেজাজ যখন আসে, তখন তাহার অবসরের মুহূর্ত, দেহ ও মনের বিশ্রামের অবকাশ, সে তখন নিঃসঙ্গ মনের গহনে বিচরণশীল। সুতরাং বহির্জগতের আড়ম্বর ও আয়োজন সেখানে পৌঁছিতে পারে না।” একই গবেষক আরও লিখেছেন- “বর্তমানে এক শ্রেণীর ‘সহুরে’ ভাটিয়ালির সঙ্গে আমাদের পরিচয় স্থাপিত হইয়াছে। তাহার প্রধান বিশেষত্ব এই যে, নানা বাদ্য-যন্ত্র সহযোগে তাহা গীত হয়; সুতরাং পল্লীর ভাটিয়ালির প্রধান বৈশিষ্ট্যই ইহাতে রক্ষা পায় না। ইহার আর একটি বিশেষত্ব এই যে, অনেক সময় পল্লীর ভাটিয়ালির নিজস্ব ভাষা পরিবর্তিত করিয়া ইহা সহরের রুচি অনুযায়ী নূতন করিয়া রচিত হইয়া থাকে। এই ভাবে পল্লীর ভাটিয়ালিতে যাহা দেহতত্ত্ব বিষয়ক বলিয়া পরিচিত, তাহাই সহরে আসিয়া সাধারণ প্রেম-সঙ্গীত হইয়া দাঁড়ায়। কারণ, সহরের সঙ্গীত-বিলাসী অধিবাসীরা তত্ত্ব অপেক্ষা প্রেম-বিষয়টিই অধিকতর আকর্ষণীয় বলিয়া অনুভব করে। পল্লীর ভাটিয়ালিতে দীর্ঘায়ত চড়া স্বরের মধ্যে আন্দোলন বা কম্পন অধিক থাকে না; এমনকি, থাকে না বলিলেও চলিতে পারে; কিন্তু সহরে নানা রাগ-সঙ্গীতের প্রভাব বশত তাহা বিচিত্র আন্দোলন যুক্ত হইয়া থাকে। এই ভাবে ভাটিয়ালির যাহা প্রকৃত রস, তাহা ‘সহুরে’ ভাটিয়ালির মধ্য দিয়া প্রকাশ পাইতে পারে না।” দু’একটি ব্যতিক্রম ভিন্ন গবেষকের এই অভিমতের দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের শহুরে মঞ্চে এবং মিডিয়ায় পরিবেশিত ভাটিয়ালি গানে প্রায়শ প্রত্যক্ষ করা যায়। এক্ষেত্রে ভাটিয়ালি গানের প্রকৃত স্বরূপ পর্যবেক্ষণ করতে হলে গ্রামাঞ্চলের সংগীতের আসরে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

সবশেষে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশের মানুষের আত্ম-উপলব্ধির নেশা ও আগ্রহ থেকে এদেশের সর্বত্র বিচিত্র ধারায় ভাটিয়ালি গানের চর্চা ও পরিবেশন অব্যাহত রয়েছে। যুগের পরিবর্তন ও অগ্রগতিতে এই গানের রূপ রূপান্তর এমনভাবে ঘটে আসছে যে, এর ভবিষ্যৎ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এই পর্যবেক্ষণ থেকে নিশ্চিতভাবে একথাও বলা যায়, যে ভাটিয়ালি গান অনাদিকাল থেকে এখনো বাঙালির প্রাণের ধন হয়ে মুখে মুখে গীত হয়ে আসছে, তার ক্ষয় নাই।


Saymon Zakaria

লেখক পরিচিতি

ড. সাইমন জাকারিয়া
লেখক ও গবেষক, ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ


তথ্যসূত্র ও টীকা :
১. হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গীয় শব্দকোষ, দ্বিতীয় খ-, সাহিত্য অকাডেমি, কলকাতা, ২০০৮, পৃ. ১৬৬৭
২. নির্মলেন্দু ভৌমিক, “ভাটিয়াল- ভাটিয়ালি গান”, সনৎকুমার মিত্র (সম্পাদিত), লোকসংস্কৃতি গবেষণা পত্রিকা, ‘ভাটিয়ালি’ বিশেষ সংখ্যা, (কলিকাতা : লোকসংস্কৃতি গবেষণা পরিষদ, জানুয়ারি-মার্চ ১৯৯৫), পৃ. ৩৭৮
৩. প্রাগুক্ত
৪. আশুতোষ ভট্টাচার্য, বঙ্গীয় লোক-সঙ্গীত রত্নাকর, (কলিকাতা : পশ্চিমবঙ্গ লোক-সংস্কৃতি গবেষণা পরিষদ, ১৯৬৭), পৃ. ১৫৮৭
৫. প্রাগুক্ত
৬. মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (সম্পাদিত), হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা, (কলিকাতা : বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ, দ্বিতীয় মুদ্রণ ভাদ্র ১৩৫৮), পৃ. ৭২
৭. সাইমন জাকারিয়া, অবণাগবণ: সমকালীন বাংলা ভাষায় প্রাচীন চর্যাপদের রূপান্তরিত গীতবাণী, (ঢাকা : অ্যাডর্ন পাবলিকেশন, সেগুনবাগিচা), পৃ. ৬১
৮. আশুতোষ ভট্টাচার্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৮৮
৯. মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (সম্পাদিত), প্রাগুক্ত, পৃ. ১০
১০. সাইমন জাকারিয়া, প্রাগুক্ত, পৃ. ২১
১১. মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (সম্পাদিত), প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬
১২. সাইমন জাকারিয়া, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৪
১৩. মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (সম্পাদিত), প্রাগুক্ত,পৃ. ২৬
১৪. সাইমন জাকারিয়া, প্রাগুক্ত,পৃ. ৩০
১৫. মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (সম্পাদিত), প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৪
১৬. সাইমন জাকারিয়া, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৬
১৭. মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (সম্পাদিত), প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৯
১৮. সাইমন জাকারিয়া, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৬
১৯. আশুতোষ ভট্টাচার্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৮৭
২০. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৯০-৯১
২১. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৮৪
২২. ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত আশুতোষ ভট্টাচার্যের কথার সঙ্গে মিল রেখে বিশ্বখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী প্রয়াত নির্মলেন্দু চৌধুরী ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে লিখেছিলেন-
“উন্মুক্ত আকাশের নীচে- ভাইটাল স্রোতে নৌকা চলে নদীর বুকে ধীর মন্থর গতিতে। তারই মাঝে আপন মনে মাঝি নৌকা চালায় অথবা পাল তুলে হাল ধরে থাকে বসে।
তার দেহ মন ক্লান্ত শ্রান্ত ও অবসাদে আচ্ছন্ন। এই একঘেয়েমী থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য মাঝি গেয়ে ওঠে:
‘নাইয়ারে-
সুজন নাইয়া নদীর কূল পাইলাম না-
কাল মেঘে সাজ কইরাছে পরাণতো মানে না,
কিনারা ভিরাইয়া ধ্ইারো
নাও যেন ডুবে নারে নাইয়া।’

ভাটিয়ালি যদিও নদীবক্ষে মাঝির কণ্ঠে গী তবা ধ্বনিত হয়, তবুও গ্রাম্য জীবনকে এই সুর মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে। তাই তার ব্যাপক প্রসারতার জন্য তাকে নদী ছেড়ে প্রান্তরের খোলা মাঠে রাখাল বা কৃষকের উদাত্ত কণ্ঠেও শুনতে পাওয়া যায়।”
নির্মলেন্দু চৌধুরী, “ভাটিয়ালি”, সনৎকুমার মিত্র (সম্পাদিত), লোকসংস্কৃতি গবেষণা পত্রিকা, ‘ভাটিয়ালি’ বিশেষ সংখ্যা, (কলিকাতা : লোকসংস্কৃতি গবেষণা পরিষদ, জানুয়ারি-মার্চ ১৯৯৫), পৃ. ৩৫১
২৩. আশুতোষ ভট্টাচার্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৮৪
২৪. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৮৫
২৫. নির্মলেন্দু চৌধুরী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৫২
২৬. প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৫২-৩৫৩
২৭. ছন্দা সেনগুপ্ত, “ভাটিয়ালি সুর ও রবীন্দ্রসঙ্গীত”, সনৎকুমার মিত্র (সম্পাদিত), লোকসংস্কৃতি গবেষণা পত্রিকা, ‘ভাটিয়ালি’ বিশেষ সংখ্যা, (কলিকাতা : লোকসংস্কৃতি গবেষণা পরিষদ, জানুয়ারি-মার্চ ১৯৯৫), পৃ. ৩৮৩-৩৮৪
২৮. প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৮৪
২৯. মহসিন হোসাইন, ভাটিয়ালী গানের রাজা পাগল বিজয়, (যশোর : কুন্তলা ভবন, মাউলী, মাঘ ১৩৮৬), পৃ. ১৭
৩০. যতীন সরকার (সম্পাদিত), জালালগীতিকা সমগ্র, (ঢাকা : নন্দিত, শাহবাগ, মার্চ ২০০৫), পৃ. ১২৫
৩১. মাহবুব কবির (সংগৃহীত ও সম্পাদিত), উকিল মুন্সীর গান, (ঢাকা : ঐতিহ্য, বাংলা বাজার, ফেব্রুয়ারি ২০১৩), পৃ. ৩৪
৩২. শাহ আবদুল করিম, কালনীর কূলে, (সিলেট : লোকচিহ্ন, বাগবাড়ি, নভেম্বর ২০০১), পৃ. ৩২
৩৩. আশুতোষ ভট্টাচার্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৯৪-১৫৯৫
৩৪. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৯৫
৩৫. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৯৫-১৫৯৬
৩৬. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৯৪
৩৭. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬০০


More Publications